Skip to main content

ইয়েতিবাড়ির ইতিবৃত্ত

 তন্ময় মন্ডল 

শিশু কিশোর সাহিত্যের পাঠকদের কাছে রতনতনু ঘাটী একটি পরিচিত নাম। তার যে বইটি নিয়ে আলোচনা করব সেটির নাম ইয়েতি বাড়িতে কে থাকে। বইটিতে রয়েছে দুটি অ্যাডভেঞ্চার নভেলা। প্রথম উপন্যাসের নাম ইয়েতি বাড়িতে কে থাকে আর দ্বিতীয়টি ফেরারি দুর্গের ছায়ামূর্তি রা। দুটো নামকরণই ছোটদের কেন যে কোন বয়সের উৎসাহী পাঠকের কৌতুহল তৈরি করার জন্য যথেষ্ট।

প্রথম উপন্যাসিক খাতির তে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বুদ্ধি ধার একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। মায়ের সঙ্গে বুদ্ধি ধার আর তার বন্ধু সোহম হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার পর মামার বাড়ি সিকিমের জুলুখে যায়। সেখানেই যত অ্যাডভেঞ্চারের গল্প জমে ওঠে। বুদ্ধি ধরে তিন মামা তিন রকম। তবে মেজ মামা দ্বিখন্ডসুন্দরের জীবনে অ্যাডভেঞ্চার ভয়ঙ্কর রকমের। কলেজ পাশ করার পর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। কেউ বলত তাকে নেপালে যাওয়ার বাস ধরতে দেখা গেছে, কেউ বলত তিনি হিমালয় চলে গেছেন। সেই মামা ফিরেছেন আর বুদ্ধি ধরা ও এই সময়ে মামার বাড়ি গিয়ে হাজির। সেই মেজো মামার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি আছে, মামা সেখানে মাঝে মাঝে যান এবং তিনি সেটার নাম দিয়েছেন 'ইয়েতিবাড়ি'। কি আছে সেই ইয়েতি বাড়িতে কেউ জানে না, তবে খুব বিস্ময়কর কিছু একটা যে আছে তার ইঙ্গিত পেয়েছে বুদ্ধিধররা। মামার কাছে ইয়েতির খোঁজে নেপাল তিব্বতে ঘোড়ার কথা অ্যাডভেঞ্চারের কথা শুনতে থাকে বুদ্ধিধর আর সোহম। মামার হিমালয়ের গ্রামে দিনের পর দিন থাকার অভিজ্ঞতার কথা। লাল আমের মানুষ টিকে থাকার গল্প শুনতে শুনতে বিদেশের নিউজ পেপারের লোক আসে মেজো মামার খোঁজে। তাদের কাছে নাকি খবর আছে দ্বিখন্ডক সুন্দর বাবু একটা বেবি ইয়েতিকে এনে জুলুকে ধরে রেখেছে। ইয়েতি কি সত্যিই আছে? নাকি মিথ? লেখক সুকৌশলে কল্পনার আশ্রয় এক আশ্চর্য বুননে গুনেছেন এই কাহিনি। ইতিহাস বা প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধাচারণ কোথাও নেই। অথচ টানটান কাহিনী আটকে রাখবে পাঠককে।

'ফেরারি ঘরে দুর্গের ছায়ামূর্তিরা' উপন্যাসিকাও একটি ছোট ছেলে আর তার বোনের বাবা-মায়ের সঙ্গে পূর্বপুরুষের দুর্গ খুঁজতে যাওয়ার গল্প, যা তার এক পূর্বপুরুষ পর্তুগিজদের কাছ থেকে কিনেছিল। রাতের অন্ধকার। 4 টি প্রাণী। টানটান রোমাঞ্চ। বিজ্ঞানমনস্ক লেখক এর এই লেখায় কোথাও অ্যাডভেঞ্চারের প্রয়োজনে অস্বাভাবিক কোনো কিছুকে সমর্থন করেনি। শিশু-কিশোরদের মনস্তত্ত্বের কথা যেমন তিনি মাথায় রেখেছেন তেমনি এই অ্যাডভেঞ্চারের আলোতেই মূল্যবোধের কিছু বার্তা রাখা আছে লেখাদুটিতে।

দুটি উপন্যাস শিকার কাহিনী বিন্যাস থেকে চরিত্র চিত্রায়ন মনে দাগ কাটার মতই। মোটের উপর এই বইটি শিশুপাঠ্য হিসাবে যে চমৎকার তা তো হলফ করে বলা যায়। আর বড়রাও যদি এর আবর্তে পড়েন তবে শেষ না করে উঠতে পারবেন না।

ইয়েতিবাড়িতে কে থাকে
লেখক : রতনতনু ঘাটী
পালক পাবলিশার্স
মূল্য : ১৬৬ টাকা

Comments

Popular posts from this blog

উদার আকাশ - ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৭, শুধু সম্প্রীতির নয়, সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের উদাহরণ

সুরাইয়া পারভিন : বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। উদার আকাশ - ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৭, শুধু সম্প্রীতির নয়, সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের উদাহরণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বহু ভাষা ও বহু ধর্মের দেশ এই ভারত। এই দেশের মূল্যবান সংস্কৃতির টানে বহির্দেশ থেকে বহু মানুষ এখানে এসেছেন এবং এদেশের সংস্কৃতির মেলবন্ধনে বাঁধা পড়েছেন। সংস্কৃতির কাজ হল এই বহুত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধন। তাকে স্মরণে রেখে ‘উদার আকাশ’ প্রকাশ করেছে ‘ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা - ১৪২৭’। সংখ্যাটি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রখ্যাত লেখক ও পুরাণ-রামায়ণ-মহাভারত-গবেষক ও শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, আজকাল ভারতবর্ষে যে মুহূর্তগুলো চলছে তা আমার কাছে খুবই হন্তারক সময় বলে মনে হয়। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে হিংসা দ্বেষ - এগুলো নিয়ে আছে। কিন্তু ভারতবর্ষ এমনই একটা দেশ যেটা Mutilingual, Multireligious। শত শত নয়, হাজার হাজার বছর ধরে এদেশ সেরকমভাবেই চলছে। এখানে যেমন Brahminism ছিল, Buddhism ছিল, তেমনি নাথ সম্প্রদায়েরা ছিলেন, শৈব সম্প্রদায়েরা ছিলেন, আছেন অনন্ত সম্প্রদায়। তাঁরা সহবাস করেছেন। যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছিলেন, তৎকালীন দিনে, তাঁদেরও অ