Skip to main content

উদার আকাশ - ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৭, শুধু সম্প্রীতির নয়, সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের উদাহরণ

সুরাইয়া পারভিন :

বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

উদার আকাশ - ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৭, শুধু সম্প্রীতির নয়, সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের উদাহরণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

বহু ভাষা ও বহু ধর্মের দেশ এই ভারত। এই দেশের মূল্যবান সংস্কৃতির টানে বহির্দেশ থেকে বহু মানুষ এখানে এসেছেন এবং এদেশের সংস্কৃতির মেলবন্ধনে বাঁধা পড়েছেন। সংস্কৃতির কাজ হল এই বহুত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধন। তাকে স্মরণে রেখে ‘উদার আকাশ’ প্রকাশ করেছে ‘ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা - ১৪২৭’। সংখ্যাটি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রখ্যাত লেখক ও পুরাণ-রামায়ণ-মহাভারত-গবেষক ও শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, আজকাল ভারতবর্ষে যে মুহূর্তগুলো চলছে তা আমার কাছে খুবই হন্তারক সময় বলে মনে হয়। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে হিংসা দ্বেষ - এগুলো নিয়ে আছে। কিন্তু ভারতবর্ষ এমনই একটা দেশ যেটা Mutilingual, Multireligious। শত শত নয়, হাজার হাজার বছর ধরে এদেশ সেরকমভাবেই চলছে। এখানে যেমন Brahminism ছিল, Buddhism ছিল, তেমনি নাথ সম্প্রদায়েরা ছিলেন, শৈব সম্প্রদায়েরা ছিলেন, আছেন অনন্ত সম্প্রদায়। তাঁরা সহবাস করেছেন। যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছিলেন, তৎকালীন দিনে, তাঁদেরও অনেকদিন এদেশে থেকে যাওয়ায় আমি মনে করি, তাঁরা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে গেছেন। আমরাও মিশেছি, তাঁরাও মিশেছেন। এটা দেওয়া নেওয়ার একটা সম্পর্কের মধ্যে দাঁড়িয়েছে...........। কিন্তু সংস্কৃতির কাজ হল সেটাই যেটা Ultimately এমন একটা জায়গায় পৌঁছয় - আমরা দেখছি যে একটা No man's land-এ আসে। ..........রাজনীতির হানাহানির কথা আমি বলতে পারব না। সেগুলো চলে, সেগুলো চলতে থাকে। কিন্তু তারই অন্তরালে এই যে সংস্কৃতির আদান প্রদান এমন একটা Consolidated জায়গায় এসে দাঁড়ায় যেখানে আমরা একজন আরেকজনকে অস্বীকার করতে পারি না। আমার মনে হয় উদার আকাশ - যেখানে ঈদ এবং শারদ সংখ্যা করছে, একসঙ্গে করছে, সেটা শুধু সম্প্রীতির উদাহরণ নয়, কথাটা খুব ক্লিশে, আমি মনে করি সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের উদাহরণ এটা”


বিশ্বজোড়া করোনাকালীন দুর্যোগের মধ্যে যখন বহু স্বনামধন্য পত্রিকা ছাপাখানার মুখ দেখতে পাচ্ছে না, কিম্বা অনেকেই অনলাইনে পিডিএফ ফর্মাটে দায় সারছেন তখন স্বমহিমায় আরও বৃহৎ কলেবরে দুই বাংলার উল্লেখযোগ্য লেখকদের সঙ্গে নতুন প্রতিভাবানদের লেখা সযত্নে দু’মলাটের মধ্যে তুলে ধরে প্রকাশিত হয়েছে উনিশ বছরের ঐতিহ্যশালী 'উদার আকাশ' পত্রিকাটি।

উভয়বঙ্গের প্রায় ১৬৩ জন সাহিত্য-যোদ্ধার প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার, ভ্রমণ, গল্প, কিতাব চর্চা, কবিতা সহ একাধিক বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে উদার আকাশ বিশেষ সংখ্যাটি।

৩৩টি প্রবন্ধ, ২১টি গল্প, ৯৪টি কবিতা, ৩টি অনুবাদ কবিতা, ছড়া, একটি সাক্ষাৎকার ও ২টি স্মরণ। এছাড়াও রয়েছে ‘উদার আকাশ’-এর বিগত দুটো সংখ্যা নিয়ে এম. সদর আলীর লেখা পাঠ প্রতিক্রিয়া, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে ছড়ার মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি, মানবসেবা সংক্রান্ত প্রতিবেদন, আধুনিক বাংলা কবিতা : স্বপ্ন সম্ভাবনা সংক্রান্ত সুবোধ সরকারের তুখোড় আলোচনা। অবশ্য-পাঠ্য লেখাটি সঙ্কলন ও সংযোজনা করেছেন অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কবিতার ভুবনে এই আন্তর্জালিক বক্তৃতামালার সমৃদ্ধ প্রয়াস নিঃসন্দেহে এক সার্থক আয়োজন। 

২৫৬ পৃষ্ঠার উদার আকাশ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যায় পরতে পরতে রয়েছে সাহিত্য-রসে টইটম্বুর প্রয়াস। সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশ অব্যাহত রাখতে ভাঙড় এলাকার ঘটকপুকুর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে পত্রিকাটি। উদার আকাশ প্রকাশন উদার জীবনের অন্বেষণে পাঠককে সমৃদ্ধ করেছে ইতিমধ্যেই।

ঈদ-শারদ বিশেষ সংখ্যায় কলম ধরেছেন বহু প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। এই সংখ্যা যাদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁরা হলেন প্রবন্ধে ফারুক আহমেদ, বাসব চৌধুরী, চন্দ্রপ্রকাশ সরকার, খাজিম আহমেদ, জয়ন্ত ঘোষাল, সুমন ভট্টাচার্য, মনিরুল ইসলাম, মীরাতুন নাহার, মইনুল হাসান, জহির-উল-ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, তৈমুর খান, আবু রাইহান, আবেদা সুলতানা, সাইফুল সেখ, মনিরুদ্দিন খান, গোলাম রাশিদ, প্রদিতি রাউত প্রমা, শেখ মকবুল ইসলাম, বাহারুল হক, রিফাত আহমেদ, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মদ শামসুল আলম, শান্তনু মন্ডল, শান্তনু প্রধান, শুভেন্দু মন্ডল, সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ, সুজাউদ্দিন সেখ, শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, একরামূল হক শেখ, অরূপ চন্দ্র প্রমুখ।

ইতিহাস গবেষক জাহিরুল হাসান-এর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদক ফারুক আহমেদ। সদ্য প্রয়াত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ বিভাগে আলোকপাতও করছেন সম্পাদক।

এই সংকলনে কবিতা লিখেছেন সুবোধ সরকার, জহর সেনমজুমদার, নাসের হোসেন, মুহম্মদ মতিউল্লাহ্, পাবলো শাহি, তুষার ভট্টাচার্য, গোলাম রসুল, সৌমিত বসু, অংশুমান কর, এবাদুল হক, তাজিমুর রহমান, আবদুস শুকুর খান, গৌরীশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, পিয়াস মজিদ, কামরুল বাহার আরিফ, রাজন গঙ্গোপাধ্যায়, নরেশ মন্ডল, আশিস সান্যাল, অমল কর, হান্নান আহসান, আসাদুল্লা আল গালিব, নাসিম-এ-আলম, সুব্রতা ঘোষ রায়, হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়, নাহার আহমেদ প্রমুখ।

একটি দীর্ঘ কবিতা লিখেছেন লালমিয়া মোল্লা। এছাড়া ছড়ায় বিদ্যাসাগর স্মরণ করেছেন আনসার উল হক, স্বপন পাল, ইভা চক্রবর্তী, জ্যোতির্ময় সরদার, চন্দন নাথ। সাধারণ ছড়া বিভাগে আছেন পঞ্চমী গোল ও শঙ্কর কুমার চক্রবর্তী। অনুবাদ কবিতায় আছেন অমিতাভ চক্রবর্তী ও কবিরুল ইসলাম কঙ্ক।

অসাধারণ ভালো গল্প লিখেছেন মঈন শেখ তাঁর গল্পের নাম ফসল, মাসউদ আহমাদ, দীপক সাহা, কুমারেশ চক্রবর্তী, সামশুল আলম, অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ রেজাউল করিম, রোকেয়া ইসলাম, সোনিয়া তাসমিন খান, অংশুমান রায়, দেবাশিস মজুমদার, সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ, শামসুন নাহার, তানবির কাজি, কুশল মৈত্র, রফিকুল নাজিম, মোশারফ হোসেন, হারাধন চৌধুরী, প্রত্যুষা সরকার, তুহিনা মন্ডল, মনসুর আলী গাজী। গল্প বিভাগ পাঠক দ্বারা সমাদৃত হয়েছে। 

বিবিধ বিভাগে মানব সেবায় শিস্-এর ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন মৌসুমী বিশ্বাস, সংস্কৃতি সংবাদ পরিবেশন করেছেন রিন্টু আহমেদ।

পত্রিকাটির প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশন ও অঙ্গসজ্জা নিপুণ হাতে করেছেন প্রখ্যাত শিল্পী সারফুদ্দিন আহমেদ। অঙ্গসজ্জায় আর একজন সহযোগী ছিলেন গৌরগোপাল ভৌমিক।

উদার আকাশ প্রকাশন উদার জীবন অন্বেষণে আত্মপ্রকাশ। ইতিমধ্যে পাঠক দ্বারা সমাদৃত হয়েছে উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের বহু উল্লেখযোগ্য প্রয়াস। উদার আকাশ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি দুই বাংলার মানুষের মনে দাগ কাটবে আমার ধারণা। 

উদার আকাশ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 
মূল ১৫০ টাকা।
ফোন - ৭০০৩৮২১২৯৮

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ইয়েতিবাড়ির ইতিবৃত্ত

 তন্ময় মন্ডল  শিশু কিশোর সাহিত্যের পাঠকদের কাছে রতনতনু ঘাটী একটি পরিচিত নাম। তার যে বইটি নিয়ে আলোচনা করব সেটির নাম ইয়েতি বাড়িতে কে থাকে। বইটিতে রয়েছে দুটি অ্যাডভেঞ্চার নভেলা। প্রথম উপন্যাসের নাম ইয়েতি বাড়িতে কে থাকে আর দ্বিতীয়টি ফেরারি দুর্গের ছায়ামূর্তি রা। দুটো নামকরণই ছোটদের কেন যে কোন বয়সের উৎসাহী পাঠকের কৌতুহল তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। প্রথম উপন্যাসিক খাতির তে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বুদ্ধি ধার একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। মায়ের সঙ্গে বুদ্ধি ধার আর তার বন্ধু সোহম হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার পর মামার বাড়ি সিকিমের জুলুখে যায়। সেখানেই যত অ্যাডভেঞ্চারের গল্প জমে ওঠে। বুদ্ধি ধরে তিন মামা তিন রকম। তবে মেজ মামা দ্বিখন্ডসুন্দরের জীবনে অ্যাডভেঞ্চার ভয়ঙ্কর রকমের। কলেজ পাশ করার পর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। কেউ বলত তাকে নেপালে যাওয়ার বাস ধরতে দেখা গেছে, কেউ বলত তিনি হিমালয় চলে গেছেন। সেই মামা ফিরেছেন আর বুদ্ধি ধরা ও এই সময়ে মামার বাড়ি গিয়ে হাজির। সেই মেজো মামার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি আছে, মামা সেখানে মাঝে মাঝে যান এবং তিনি সেটার নাম দিয়েছেন 'ইয়েতিবাড়ি'। কি আছে সেই ইয়েতি বাড়িতে